নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালেয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার

ফাইল ছবি

বছরব্যাপী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সিরিজ সেমিনারের আয়োজন করেছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। ‘শিক্ষার্থীদের মনোজগত ও জঙ্গিবাদ বিরোধিতা’ শিরোনামে প্রথম সেমিনারটি রোববার বনানীর নর্দার্ন ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশ এর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সুচিন্তা ফাউন্ডেশন এর ডিরেক্টর ও ‘আজ সারাবেলা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কানতারা খান শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, সুচিন্তা একটি প্লাটফর্ম ও নের্টওয়ার্ক যা তরুণদের জয়বাংলার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। তরুণদের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ঢাকাভিত্তিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার কার্যক্রমের আয়োজন করেছি।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে হাজার বছরের বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তব্য রাখেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ বিস্তারের কারণ হচ্ছে অভিভাবক বা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার না করা। যারা এই বিভ্রান্তিকর মতাদর্শ শিক্ষা দেয় তারা সবসময় বলে দেয় অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার না করতে। বেহেশত্ এর লোভে মানুষ হত্যা করা, কখনোই সত্যিকার ইসলাম ধর্ম নয়। মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা করার শিক্ষা দেয়নি।

কোথাও বা কারো কাছে ধর্মের অপব্যাখ্যা বা প্রলোভন শুনলে, সবার প্রথম কাজটা হচ্ছে- শেয়ার করতে হবে। কারণ অভিভাবক বা শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করলে তোমার ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই—যোগ করেন তিনি।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার সেমিনারে বলেন, কেন জঙ্গিবাদ তরুণদের আকৃষ্ট করে? এর কারণ হচ্ছে মনের অপরিপক্কতা এবং জ্ঞানের ঘাটতি। একজন বয়স্ক মানুষের অনেক কাজ এবং দায়িত্ব থাকে, নিজের কাজ, পরিবার, বাবা-মা সন্তান ইত্যাদি। কিন্তু ১৮ থেকে ২০ বছরের তরুণের এতকিছু থাকে না। তার কোনও পিছু টান নেই। তাই তাদের ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজেই বাগে আনা যায়। টার্গেট হচ্ছে তরুণেরা। বিশ্বে এ পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে, স্পষ্টভাবে দেখা যায় হামলাকারীরা ১৮ থেকে ২২ বছরের তরুণ।

তিনি আরো বলেন, ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। সঠিক বিষয়টি জানার আগ্রহ থাকতে হবে- সেটা ধর্ম হোক, ইতিহাস হোক কিংবা কোন বিশেষ বিষয়। জেনেভা কনভেনশনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যুদ্ধের সময় নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুকে হত্যা করা যাবে না। আর ইসলাম ধর্মের শুরু থেকে একই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা কী দেখতে পাই? কেউই রেহাই পাচ্ছে না। না শিশু, না নারী, না বৃদ্ধ।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) বেঁচে থাকাকালীন আরবের মক্কা, মদিনায় কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। কারণ তিনি শিখিয়েছিলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুসলমান অর্থ আত্মসমর্পণকারী। আর আল্লাহ’র কাছে আত্মসমর্পণকারী মানুষ কখনো খুন করতে পারে না।

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা কখনোই মডারেট মুসলিম না, আমরা সবসময়ই গুড মুসলিম। আমাদের হিন্দুরা গুড হিন্দু। মিযানমারের বৌদ্ধরা মুসলিমদের বিতাড়িত করছে, কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এদেশের বৌদ্ধরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে সহযোগিতা করছে। প্রকৃত মুসলিমের কাছে অন্য ধর্মের মানুষ নিরাপদ থাকবে। কিন্তু কোথায় সেই মুসলিম! বিদায় হজের ভাষণে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।’ কিন্তু আমরা কী তা মানছি?

তিনি আরো বলেন, ৪৭-এর দেশভাগ আমাদের মহৎ কিছু দেয়নি। ইংরেজরা যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল তার ফল ভোগ করছি আমরা। মহাত্মা গান্ধী’র অহিংসতাবাদ থেকে আমরা সরে এসেছি। এখন হিংসা ও বিদ্বেষ আমাদের পরিচয় হয়ে উঠেছে।

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট জববার হোসেন।