1. [email protected] : admi2017 :
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন

‘মাধ্যমিকে ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের ৭০ শতাংশ পড়ানো হয় না’

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ৮.৪২ এএম
  • ৪৪১ বার পঠিত
ফাইল ছবি

মাধ্যমিক স্কুলে ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের ৭০ ভাগ পাঠ্যক্রম পড়ানো হয় না। এভাবেই বছর শেষ করে নতুন ক্লাসে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নির্ধারিত পাঠের বেশিরভাগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কোনো ধারণা থাকে না। এতে করে ইংরেজি বিষয়ে তারা দুর্বল থেকে যাচ্ছে। আর উচ্চশিক্ষা যেমন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বা অন্য সেক্টরে ভালো করতে পারছে না। তেমনি চাকরিবাজারেও হোঁচট খাচ্ছে।

বুধবার বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে (ইউল্যাব) আয়োজিত এক ব্রেইনস্ট্রমিং (ধারণা তৈরি) অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

তারা জানান, পাঠ্যবইয়ের বাকি ৭০ শতাংশ পাঠ না হওয়ার পেছনে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষার্থীরা দায়ী। পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টের (পাঠ্যবিষয়) দায়ও কম নয়। বক্তারা দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহন্ত, ইউল্যাবের অধ্যাপক ড. এইচএম জহিরুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শায়লা সুলতানা, ভিকারুন নিসার সাবেক ইংরেজির শিক্ষক শায়লা আহমেদ, বাংলাদেশ ইংরেজি ভাষা শিক্ষক সমিতির (বেলটা) হারুন-অর-রশিদ, কারিকুলাম ও পাঠ্যবই বিশেষজ্ঞ আবদুর রহিম, জাহিদ বিন মতিন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ড. জাহিদ, ইউল্যাবের ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অ্যধ্যাপক ড. শামসাদ মর্তুজাসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা বক্তৃতা করেন।

‘মাধ্যমিক স্কুলের ইংরেজি ভাষা শিক্ষণ ও শিখন মূল্যায়ন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্পযুগে প্রবেশ করেছি। এই যুগে দেশকে বিশ্বের বুকে গৌরবের সঙ্গে তুলে রাখতে দক্ষ জনসম্পদ প্রয়োজন। সেজন্য আগামীতে যারা দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন তাদের ইংরেজি ভাষার ওপর দখল থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থীদের ইংরেজির দখল হতাশাজনক পর্যায়ে আছে। এটির কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস এটি। পর্যায়ক্রমে আমরা আরও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবও। সর্বশেষে এ বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হবে।

ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহন্ত শিক্ষাথীদের ইংরেজি দক্ষতার অর্জনের জন্য শিক্ষণ ও শিখন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ১৯টি পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠবইয়ের বাইয়ে অন্য কোনো সোর্স থেকে ইংরেজি শেখার সুযোগ নেই। শিক্ষকদের শেখানোর ব্যাপারে আবশ্যিকভাবে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। ইংরেজি শিক্ষকদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরির ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা বা অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন না। শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেই। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ নজর নেয়া হয় না ক্লাসরুমে।

 

ইউল্যাবের উপাচার্য ড. জহিরুল হক বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে ত্রুটি থেকে যায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই ইংরেজিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপযুক্ত পাঠদানের মাধ্যমে দক্ষতা দিতে শুধু শিক্ষক বা শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করলে হবে না। গোটা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে হবে।

অন্ষ্ঠুানে একজন সাংবাদিক শিক্ষক-অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, পাঠ্যবই এবং শিক্ষক ও ক্লাসরুম অ্যাকটিভিটির বাইরে উপযুক্ত শিক্ষণ-শিখনের জন্য এটাও জরুরি। যেহেতু পাঠদানে ঘাটতি থাকে এবং ৩০ শতাংশ মাত্র পাঠদানে আসে, তাই বাকিটা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করতে হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র চালু করতে হবে। কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে গ্রামারের প্রত্যক্ষ পাঠ উপেক্ষিত। নবম শ্রেণি পর্যন্ত গোটা গ্রামারের পাঠ ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে সহজ থেকে ক্রমান্বয়ে কঠিন পাঠ সাজাতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি ক্লাসরুমে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। নইলে যত আধুনিক পাঠ্যবই, দক্ষ শিক্ষক আর কৌশল প্রবর্তণ করা হোক কোনো লাভ হবে না।

বেলটার হারুন অর রশিদ বলেন, মাদরাসায় মাধ্যমিক পর্যায়ে মাত্র ২৯ শতাংশ শিক্ষক প্রশিক্ষিত। মাদরাসাগুলোর ৯৪ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। এই ধারায় ইংরেজি শিক্ষায় প্রধান বাধা কমযোগ্য বা অদক্ষ শিক্ষক। সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে মাদরাসা শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এরজন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বিএমটিটিআই) দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়।

হারুন অর রশিদের এ কথার সমর্থন করে মাদরাসা বোর্ডের ড. জাহিদ বলেন, বিএমটিটিআইতে যে প্রশিক্ষণের সুবিধা আছে তাও অপ্রতুল। মাত্র একমাসের একটি ট্রেনিং হয়। আসন সংখ্যা এতই কম যে, বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে ৪০ বছর লাগবে। এই স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষক সংকটও অন্যতম সমস্যা বলে মনে করেন তিনি।

ড. শায়লা সুলতানা বলেন, আমাদের গবেষণায় মাধ্যমিকে ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান দুই সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। তা হচ্ছে, পাঠ্যবই এবং শিক্ষকের দক্ষতার ঘাটতি। কোনো প্রশিক্ষণই পাঠদানে প্রয়োগ হয় না। শিক্ষকরা গতানুগতিক পদ্ধতিতেই পাঠদান করেন। যেহেতু পরীক্ষায় পাস করাতে হবে তাই তারা এই পস্থা বেছে নেন।

একজন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ বলেন, যেহেতু সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য এই অনুষ্ঠান। তাই খোলামেলাভাবে কথা বলতেই হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি নেই। বরং প্রশিক্ষণে তারা এই ভারাক্রান্ত যে, এক-একজন দশটি প্রশিক্ষণও পেয়েছেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে পাঠদানের নিদের্শনা ও গাইডলাইন দেয়া হয়। অনেক শিক্ষক তা দেখেন না। এমনকি পাঠ্যবইয়ে দিয়েও দেখানো যায়নি। তারা এর চেয়ে গাইড বইয়ে কী নির্দেশনা আছে সেটি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

আরেকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ইংলিশ ভার্সনের বইয়ের খুবই দুরবস্থা। দক্ষ বিশেষজ্ঞরা বাংলা ভার্সনের বই অনুবাদ করেছেন। তারপরও ওই পরিস্থিতি। বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ আবদুর রহীম বলেন, মাধ্যমিকের ইংরেজি বইয়ের কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এর ফলে এটি আরও সহজবোধ্য ও পাঠোপযোগী হবে। নতুন শিক্ষাবর্ষে নবম-দশম শ্রেণির যে ইংরেজি বই যাচ্ছে সেটিও সুখপাঠ্য হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

themesbazar_newssitedesign
© All rights reserved  2019 CreativeNews
Theme Download From ThemesBazar.Com