1. [email protected] : admi2017 :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

চাকমা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৯৬১ বার পঠিত

চাকমা তথা চাংমা বাংলাদেশের প্রধান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতে চাকমাদের সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাতে এদের সংখ্যা বেশী। তবে বান্দরবানেও স্বল্প সংখ্যায় চাকমাদের উপস্থিতি রয়েছে। চাকমা জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্বাংশে তথা ত্রিপুরা ও অরুণাচল রাজ্যে বসবাস করছে। এছাড়া চাকমাদের বড় একটি অংশ অভিবাসন নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে।

চাকমাদের প্রধান জীবিকা কৃষি কাজ। এরা প্রধানত থেরাবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তবে বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছে। বুদ্ধপুর্ণিমা ছাড়া তাদের অন্যতম প্রধান আনন্দ উৎসব বিজু। চাকমাদের ভাষার নামও চাকমা (চাংমা)। চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। বাঁশের অঙ্কুর হল চাকমাদের ঐতিহ্যগত খাদ্য। তারা এটাকে “বাচ্ছুরি” নামে ডাকে। এছাড়া চাকমারা শুকরের মাংস খেতে পছন্দ করে।

চাকমা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের সার্কেলের প্রধানকে রাজা বলে থাকে। সার্কেল চিফ তাদের প্রথা, রীতি, নীতি, ভূমি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, পার্বত্য জেলা পরিষদ অধিবেশনে যোগ দেয়া, কার্বারী নিয়োগ, হেডম্যান নিয়োগের মত কাজ করে থাকে। কার্বারীরা যাবতীয় ঝগড়া, নানা সমস্যার নিস্পত্তি করে থাকে। হেডম্যানরা অনেক কাজ করলেও মুল কাজ খাজনা তোলা। চাকমা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। চাকমা সমাজে ছেলেরা পূর্ব পুরুষদের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার। ছেলেদের বর্তমানে কন্যা সন্তান কেবলমাত্র বিয়ের কাল পর্যন্ত ভরনপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখে। পিতা বা স্বামীর অবর্তমানে চাকমা নারীরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।

চাকমাদের আদিনিবাস ও মূল উৎসস্থান:

চাকমাদের বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটা আলাদা ইতিহাসগ্রন্থ হয়ে দাঁড়াবে। তবে অতি সংক্ষেপে এদের বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।  ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, চাকমারা এই দেশের আদিবাসী নয়, তারা মঙ্গোলীয় জাতির একটি শাখা। বর্তমান মিয়ানমারের আরাকানে বসবাসকারী ডাইংনেট জাতিগোষ্ঠীকে চাকমাদের একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়।

আনুমানিক ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে পর্তুগিজ মানচিত্র প্রণেতা লাভানহা অঙ্কিত বাংলার সর্বাপেক্ষা পুরাতন মানচিত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব চাকমাদের সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। কর্ণফুলি নদীর তীর বরাবর চাকমাদের বসতি ছিল। চাকমাদের আরও আগের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি তাত্ত্বিক অভিমত প্রচলিত। উভয় অভিমতে মনে করা হয়, চাকমারা বাইরে থেকে এসে তাদের বর্তমান আবাসভূমিতে বসতি স্থাপন করে। বিশেষজ্ঞের অভিমত অনুযায়ী, চাকমারা মূলত ছিল মধ্য মায়ানমার ও আরাকান এলাকার অধিবাসী।

এ অভিমতে বলা হয়, চাকমারা উত্তর ভারতের চম্পকনগর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অভিবাসী হিসেবে আসে। আঠারো শতকের শেষের দিকে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলই নয় বরং আজকের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও তাদের বিক্ষিপ্ত অবস্থান ছিল।

রাজা ভুবনমোহন রায় বিরচিত এবং বিপ্রদাশ বড়ুয়া সম্পাদিত ‘চাকমা রাজবংশের ইতিহাস’ নামক বইয়ে উল্লেখ করা আছে যে, চাকমা ও বড়ুয়ারা দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম ও আরাকানে বাস করলেও তাঁরা এখানকার আদি বাসিন্দা নন জানতে পারি। চাকমারা চম্পকনগর থেকে এসেছেন- সেই হারানো চম্পকনগরের সংখ্যা এক নয়, একাধিক- তাও জানতে পারি’।

বৃটিশ কর্ণেল প্রী (Colonel Phyree) চট্টগ্রামের বড়ুয়া ও চাকমাদের ব্রহ্ম ইতিহাসের ৪৭ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে, বড়ুয়া ও চাকমাদের আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যতার জন্য তাঁহারা দক্ষিণ বিহার অর্থাৎ মগধ হইতে আসিয়া থাকিবেন’।

 

আসামের ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তীতে চাকমা রাজ্যের রাজধানী ছিল চম্পক নগর। অনেকে বিশ্বাস করে চম্পকনগর ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এবং চাকমারা চন্দ্র বংশের ক্ষত্রীয়দের উত্তরসূরী কিন্তু তাদের চেহারার বা মুখমন্ডলের বৈশিষ্ট্য আর্যদের চেয়ে মঙ্গোলীয়দের সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সিংহভাগ চাকমাদের বিশ্বাস, তারা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের পরবর্তী বংশধর।

সার্বিক বিবেচনায় তাই বলা যায় যে, চাকমা বা অন্যান্য উপজাতীয়রা নয়, বরং বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষীরাই এই দেশের আদিবাসী। কারণ তারাই প্রোটো-অস্ট্রোলয়েড (Proto Astroloid) নামের আদি জনধারার অংশ এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তারাই একমাত্র আদিবাসী বা Son of the Soil বলে দাবি করতে পারে। এর পেছনে অনেক জাতিতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণও রয়েছে। বিশ্বের তাবৎ শীর্ষস্থানীয় নৃবিজ্ঞানী এবং গবেষকবৃন্দই এ ব্যাপারে একমত।

আদিবাসী বিতর্ক এবং চাকমাদের অবস্থান:

 

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই; বরং মূল বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিপরীতে এই অ-বাঙালি জনসমষ্টিকে- উপজাতি; ক্ষুদ্র জাতিসত্তা; নৃগোষ্ঠী নামে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু, এই অ-বাঙালি জনগোষ্ঠী জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণা ২০০৭ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১০৭ ও ১৬৯ নং কনভেনশনের ঘোষণা অনুযায়ী নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করে আসছে।

তবে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ফলে আদিবাসী ইস্যু কিছুটা স্তিমিত হলেও কতিপয় চাকমা নেতা দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাত করে এ ব্যাপারে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষতঃ UNPFII (United Nations Permanent Forum on Indigenous Issues), ILO (International Labour Organization), CHTC (Chittagong Hill Tracts Commision), আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস, আদিবাসী ফোরাম ইত্যাদি সংগঠনের মদদে এই ইস্যুটি এখনও চলমান রয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং অন্যান্য চাকমা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একাংশ।

চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় UNPFII’এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে ২০১১-২০১৩ এবং ২০১৪-২০১৬ সালের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই অবস্থানকে পুঁজি করে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী/সংস্থাসমূহের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অত্যন্ত সুকৌশলে ইস্যুটির স্বপক্ষে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন দেশে (অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ইত্যাদি) অভিবাসী হিসেবে বসবাসরত পার্বত্য উপজাতীয় সদস্যদের দ্বারাও একই তৎপরতা লক্ষ করা যায়।

সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে সরকারি বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা বা সংস্থার ব্যানারে এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধির মাধ্যমে এই দাবির পক্ষে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে অত্যন্ত সুকৌশলে একচেটিয়া প্রচারণা চালানো হয়, যা সরকারের ভাবমর্যাদা ও অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে, মানবাধিকার কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন’কে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে এবং কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারা আদিবাসী প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই দাবিকে পুনরায় জোরালো করবার তৎপরতা জারি রয়েছে।

চাকমাদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?

আমার মত অনেক মানুষের মাথার মধ্যেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশের ভেতর সকল উপজাতীয়রা স্বায়ত্তশাসিত বা স্বশাসিত অঞ্চল ও সরকার ব্যবস্থার বৈধতা পাবে। ফলে বাংলাদেশকে বিভক্ত করে তাঁরা নতুন রাষ্ট্র গঠনের বৈধতা পাবে। এসব অঞ্চলে সরকার পরিচালনায় তারা নিজস্ব রাজনৈতিক কাঠামো, জাতীয়তা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, আইনপ্রণয়ন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে এবং এসব অঞ্চলের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অধিকার ও কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ন হবে। এ জন্যই চাকমারা পার্বত্য জেলাগুলোকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর।

বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ছিলো একজন কুখ্যাত রাজাকার। তার অনুসারীরা এখনো সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর সুযোগ সন্ধানী সন্তু লারমার সাহস কোন স্তরে থাকলে ভাবুন তো, আজো সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনি!!! নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র, মুদ্রা, আইডি কার্ড থেকে শুরু করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার জন্য যত কিছু প্রয়োজন সব কিছুর প্রাথমিক যোগান তারা করে রেখেছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সিএইচটি জুম্মল্যান্ড নামে চাকমা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরিচালিত একটি পেইজের ঠিকানা এখানে দেয়া হলো (https://web.facebook.com/JUMMALAND.BD/?hc_ref=ARS8eWssT9AHidH9N357RcPPQu-q-evCgsma1Qx8_kwoIZD1hdsvT3vn7Bjh6VPwpnM)।

শুধু ফেসবুক বা সামাজিক গণমাধ্যম নয়, পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল খুলেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের প্রচার চালাচ্ছে। তারা দাবি করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন করার মতো পর্যাপ্ত অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতি কোনো ছেলের হাতের মোয়া নয়। এর সাথে জড়িত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব, ইতিহাস ও মর্যাদার প্রশ্ন।

 

মুক্তিযুদ্ধ ও চাকমাদের বিতর্কিত অবস্থান:

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কতিপয় উপজাতীয় লোকজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও বেশিরভাগ উপজাতীয়রা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে। বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন। তার আশঙ্কা ছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশে চাকমা রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন থাকবে না এবং বাঙালিদের কারণে চাকমারা স্থানচ্যুত হবে। তাই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুক্ত থেকে স্বায়ত্ত্বশাসন বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি রাংগামাটি জেলার রিজার্ভ বাজার এবং তবলছড়ি বাজারে জনসভায় ভাষণ দেন। এসব জনসভায় তিনি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন। ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের একমাত্র যুদ্ধপরাধী যার লাশ পাকিস্তানে সমাহিত করা হয়েছে। যদিও তার ইচ্ছা ছিল যাতে তার শেষকৃত্য বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে তা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর দশদিন পর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে তাকে দাহ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে চাকমা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভূমিকা:

পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ নামক দেশ গঠনের জন্য চাকমা নেতাদের একাংশ গোপনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। তারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনসহ নানান সংস্থার সাথে এ ব্যাপারে লবিং করছে। পাশাপাশি তারা নিজেদের সশস্ত্র সংগঠনের জন্য ব্যাপক অস্ত্র ক্রয় করছে। জানা যায় যে, পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসীদের কাছে মায়ানমার থেকে সব অস্ত্রের চালান আসতো আরাকান আর্মির নেতা ডা. রেনিন সোয়ের মাধ্যমে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান তিনটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস(সন্তু), জেএসএস(সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ এবং এর সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মূল চালিকা শক্তি এই চাকমা উপজাতির একাংশ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এম এন লারমার সশস্ত্র গেরিলা শান্তিবাহিনী গঠন; সন্তু লারমা, দেবাশীষ রায়, ঊষাতন তালুকদারদের দেশীয় স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন প্রচারণার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের সহায়তায় নতুন উদ্ভাবিত “আদিবাসী” স্বীকৃতির দাবী, ‘জুম্মল্যান্ড’ নামে আলাদা দেশ গঠনের চক্রান্ত এসব কিছুই চাকমা সম্প্রদায়ের দেশদ্রোহিতার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ফুটে ওঠে।

 

চাকমাদের একক আধিপত্যের কারণে পিছিয়ে পড়ছে অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়:

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস থাকলেও সর্বক্ষেত্রেই চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গই নেতৃত্বের শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। শিক্ষা এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে চাকমারা অন্যান্য উপজাতিদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সামগ্রিক শিক্ষার হার ৫৯.৬২% যেখানে চাকমাদের শিক্ষার হার ৭৩%। অথচ, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য সকল উপজাতিদের শিক্ষার হার ৪৪.৬২%।

শান্তিচুক্তির পর গড়ে ওঠা সংস্থাসমুহ যেমন- আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিতে চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশ সরকার ৫% উপজাতি কোটা বরাদ্দ করলেও এর অধিকাংশই চাকমারা ভোগ করছে। একই সাথে, বিদেশী সংস্থাসমূহের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাপ্রবাহ এবং চাকমা সম্প্রদায়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চাকমা নেতৃত্বের মধ্যে একপ্রকার স্বার্থপরতা, ক্ষমতার প্রতি লোভ এবং যেকোন প্রকারে শীর্ষ স্থান দখলের প্রবণতা কাজ করেছে।

চাকমাদের এই স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতার লোভের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় অনগ্রসরতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছে না। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে চাকমারা নিজেদের স্বার্থের কারণে কুক্ষিগত করে রেখেছে। চাকমা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সবসময় ‘নিজ’ এবং গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখা গিয়েছে। চাকমাদের এই একক আধিপত্য ও স্বার্থপরতাকে অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় মেনে নিতে পারে না কিন্তু চাকমাদের সশস্ত্র সংগঠন আর বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মহলে যোগাযোগ থাকার কারণে তারা ভয়ে কিছু বলতে পারে না।

পরিশেষ:

চাকমা সম্প্রদায়ের চিহ্নিত কিছু নেতৃবৃন্দ যদি স্বার্থপরতা ভুলে নিজ দেশ বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে তবে তা পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়কে আরো উন্নত গর্বিত বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের এই বাংলাদেশ। সকল সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচার মিলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। আর তাই অতীতের সংঘাত এবং জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে এ দেশ সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 News Smart
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com