শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

প্রশ্নফাঁসের হোতারা ধরা পড়বে তো?

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৩৯৩ বার
ফাইল ছবি

এটা খুবই দুঃখজনক যে প্রশ্ন ফাঁসের মত গুরুতর অপরাধের ঘটনা ঘটেই চলেছে। নানা রকম উদ্যোগ স্বত্ত্বেও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। সবশেষ বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সিনিয়র দুই নার্স মো. আরিফুল ইসলাম ও মো. সাইফুল ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ১৬ নভেম্বর মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের বিশেষ দল এ দুজনকে ফাঁসকৃত ১১ সেট প্রশ্নসহ রাজধানীর শাহবাগের স্মৃতি চিরন্তনের পূর্বপাশ থেকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এতেই কি সমাধান মিলবে?

গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর ১০টি কেন্দ্রে মোট চার হাজার ছয়শ সিনিয়র স্টাফ নার্স (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি তিন হাজার ছয়শ ও মিডওয়াইফ এক হাজার) নিয়োগ পরীক্ষার বিপরীতে ১৬ হাজার নয়শ’ জন অংশগ্রহণ করেন। শিউলি, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, কামিনী নামে চার সেটের প্রশ্নপত্র ছাপে পিএসসি। কিন্তু সব সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার আগে পাওয়া যায়। একাধিক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষার হলে গিয়ে তারা দেখেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক প্রথমে বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়ে অনিবার্য কারণে পরীক্ষা বাতিল করে পিএসসি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়।

‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সর্ষের ভেতরের ভূত আগে তাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোনো সহযোগিতা ছাড়া প্রশ্নফাঁস অসম্ভব ব্যাপার। আর মূল হোতারা ধরা না পড়লে সমস্যার সমাধান হবে না।’

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রশ্নফাঁসকারী একাধিক চক্র বিরাজমান। তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে। তারা প্রযুক্তির অপব্যবহার করেও প্রশ্ন ফাঁস করছে। এদের পেছনে শক্তিশালী হাত থাকাও অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। অভিযোগ আছে সর্ষের ভেতরেই রয়েছে ভূত। নাহলে এই চক্রকে কেন সামাল দেয়া যাচ্ছে না। প্রশ্নফাঁসের কারণে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। পরীক্ষার্থীরা নানা রকম গুজবে কান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিভাবকরাও যার পর নাই চিন্তিত। এ অবস্থায় যে কোনো মূল্যে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধানসহ আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইনে কারো সাজা হয়েছে এমন নজির মেলা ভার। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন ছাড়া সমাজে আইন প্রতিষ্ঠা কঠিন। যত ব্যবস্থার কথাই বলা হোক না কেন অপরাধীর শাস্তি না হলে কোনো অবস্থায়ই অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সর্ষের ভেতরের ভূত আগে তাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোনো সহযোগিতা ছাড়া প্রশ্নফাঁস অসম্ভব ব্যাপার। আর মূল হোতারা ধরা না পড়লে সমস্যার সমাধান হবে না। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্নফাঁস রোধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..