ভুলেও না ভেবেচিন্তে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন না। পুরোনোকে ভুলতে গিয়ে ভুল নতুনকে বেছে নেবেন না। যদি কোনো কারণে নতুন সম্পর্কও ভেঙে যায়, তখন মূলত আপনাকে দুটি বিচ্ছেদ নিয়েই হতাশায় ভুগতে হতে পারে।
যেকোনো সম্পর্কই অনেকটা নদীর মতো। কখনো সোজা পথে চলে, আবার কখনো বা বাঁকা। মাঝে মাঝে হয়তো সম্পর্কের গতি দুদিকে বাঁক নিয়ে আলাদা পথে ছুটতে থাকে। নদীর যেমন ‘এপার ভাঙে ওপার গড়ে’, তেমনি সম্পর্কও তথৈবচ। হোক না সেটা প্রেম বা বন্ধুত্ব। গতিশীল জীবনে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। পুরোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কমে, কিছু সম্পর্কে মরিচা ধরে; কিছু হারিয়ে যায়। কিছু সম্পর্ক অবশ্য অটুট থাকে। এর মধ্যে কিছু গাঢ় হয়; গাঢ়তর হয়। এ রকম সম্পর্কও নানা কারণে ভেঙে যেতে পারে। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন কেউ কেউ। সেই নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকেই ভুল করে ফেলি। কারণ, অনেকেই বুঝতে পারি না সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের কী করা উচিত? কীভাবে আমরা এই কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসতে পারি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বর্ষণের সঙ্গে (ছদ্মনাম) মুনিয়ার (ছদ্মনাম) পরিচয় তাঁদেরই এক বন্ধুর মাধ্যমে। পরিচয় থেকে ধীরে ধীরে কথাবার্তা, তারপর একে অপরের কাছে আসা, প্রেম। শুরুর দিকে সব ভালোভাবে চললেও কিছুদিন পর থেকেই তাঁদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দেয়। কিছুদিন দুজন মিলে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করলেও পরে মতের অমিল আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বাধ্য হয়েই সম্পর্কের দুই বছর পর নিজেরা আলাদা পথের সিদ্ধান্ত নেন। সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারটি ছেলেটি মানতে পারছিলেন না। তিনি নিজেকে একদম গুটিয়ে রাখেন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ক্লাস ঠিকমতো করেন না। একটা সময় তাঁর উপলব্ধি হয়, অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে। সব ভুলে নতুন করে জীবনকে গোছাতে হবে।
অনেকে নিজে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। তখন কোনো কাউন্সিলর বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর যা করবেন তা নিয়ে সাইকোলজি ডট কম ও মাইটি হেলথ ডট কমে এ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বেশ কিছু টিপস দেওয়া হলো:
১. সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ
সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর সেই মানুষটির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন। যত কষ্টই হোক না কেন তাঁকে কোনো ধরনের এসএমএস, ফেসবুকে মেসেজ করা অথবা ফোন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। সম্ভব হলে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজেকে বাদ দিয়ে দিন। কল, এসএমএস বা দেখা-সাক্ষাৎ যে চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেবেন, এমন নয়। নিজেকে স্বাভাবিক করতে সাময়িকভাবে এটি করতে হবে।
২. অনুভূতিকে বয়ে যেতে দিন
কাঁদুন, চিৎকার করে কাঁদুন। এতে মন কিছুটা হালকা হবে। ।
৩. মেনে নিন
‘সময় সব কিছুর প্রশমন করে’ কথাটি মাথায় গেঁথে নিতে পারেন। যতই সময় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, তত আপনি স্বাভাবিক হতে শুরু করবেন। তবে তার আগে যা ঘটেছে তা মেনে নিতে শিখুন। যদি আপনি সম্পর্কের বিচ্ছেদ নাও মেনে নিতে পারেন, তবুও বিচ্ছেদ নিয়ে বেশি ভাবতে যাবেন না। কী করলে কী হতে পারত, কিংবা আপনি হয়তো অমুক কাজটি করলে সম্পর্ক ভালো রাখতে পারতেন, এই জাতীয় চিন্তাভাবনা মাথায় এলে দ্রুত ঝেড়ে ফেলুন। কারণ, আপনি যতক্ষণ সম্পর্কের মাঝে ছিলেন, ততক্ষণ আপনার কোনো কাজ হয়তো সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলত কিন্তু এখন সেটি আর পড়বে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিচ্ছেদকে মেনে নিন।
৪. নিজেকে খুঁজুন
কে জানে আপনি হয়তো সম্পর্কের মাঝে নিজের বড় একটি সত্তাকে হারিয়ে ফেলেছেন। বিচ্ছেদের ইতিবাচক দিক হিসেবে আপনার সেই হারিয়া যাওয়া সত্তাকে নতুন করে খুঁজে পেতে পারেন। আপনার শখগুলো পূরণ করা শুরু করতে পারেন, হতে পারে সেটি বাগান করা কিংবা বই পড়া। যদি আপনার ঘুরতে ভালো লাগে তাহলে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন নতুন জায়গা দেখতে। নিজের প্রেমে নিজে পড়ুন। নিজেকে নতুন করে জানুন। নতুন নতুন জিনিসের প্রতি নিজের ভালো লাগা আবিষ্কার করুন।
৫. একা থাকার সৌন্দর্য এবং হুট করে নতুন সম্পর্কে না জড়ানো
ভুলেও না ভেবেচিন্তে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন না। পুরোনোকে ভুলতে গিয়ে ভুল নতুনকে বেছে নেবেন না। যদি কোনো কারণে নতুন সম্পর্কও ভেঙে যায়, তখন মূলত আপনাকে দুটি বিচ্ছেদ নিয়েই হতাশায় ভুগতে হতে পারে। নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি আসলে ঠিক কোন ধরনের সম্পর্কে জড়াতে চান, নতুন সম্পর্কে জড়াতে ঠিক কতখানি প্রস্তুত? কোনো কারণে আপনার নতুন সম্পর্ক কাজ না করলে সেই ধাক্কা সামলাতে পারবেন তো? সঠিক উত্তর পেলে তারপর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।