শহরের উষ্ণতম দিনে
পিচ গলা রোদ্দুরে
বৃষ্টির বিশ্বাস
তোমায় দিলাম আজ…
গানটি বাজছে ধীর লয়ে। ‘মহিনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডের এই গান শুনতে শুনতে ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি—ঘনঘোর বৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে যেন এ-ও বুঝতে পারছি, বৃষ্টির বিশ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছে চারদিকে, এই নগরে। সেদিন সকাল থেকে ঝরছিল একটানা বৃষ্টি। আকাশ ফুটো হয়ে গেলে যা হয়, বৃষ্টি…বৃষ্টি…বৃষ্টি। আর আষাঢ়ের এই ক্ষণে ‘ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’ থাকবে এ-ই তো স্বাভাবিক। হ্যাঁ, এখন হুটহাট, যখন-তখন ঝরছেই; কবিরা যাকে কাব্য করে বলেন ‘আকাশের কান্না’, আমাদের আমজনতার কাছে তা বৃষ্টিই।
বৃষ্টি আসে, আসে অলসতা। বৃষ্টির দিনে প্রথমেই মনে পড়ে কবিগুরুর বাণী, ‘ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে।’ যখন আষাঢ় গগনে ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে’, তখন বৃষ্টিমাখা দিনে ধোঁয়া ওঠা চা আর মুড়িমাখা ভালো লাগে। আর এ কথাও মনে হয় যে, আজ অফিসে না গেলে কী হয়!
কিন্তু ওই মনে হওয়াই সার, বৃষ্টি-বাদলা যা-ই হোক, অফিসে তো যাওয়াই লাগে। দায়িত্ব বলে কথা। তবে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গিয়ে চোখের পানি ফেলতে শুরু করলে আমাদের মনও যেন কেমন-কেমন করে ওঠে। ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে’ বলে বৃষ্টিতে ভিজতে মন চায়। কেউ কেউ ভেজেনও বটে। আর যাঁরা সরাসরি ভিজতে পারেন না, মনে মনে ভিজতে তাঁদের বাধা দেবে কে!
বই পড়া, গান শোনা, ছবি দেখা বা প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি—বৃষ্টিদিনে কত কী না করতে ভালো লাগে। এই ভালো লাগাকে হয়তো আরও রঙিন করে তোলে যদি এর সঙ্গে থাকে খিচুড়ি-ইলিশ মাছ ভাজা অথবা প্রিয় কোনো খাবার।
কিংবা ধরা যাক, বৃষ্টিমুখর দিনে এসব কিছুই যখন করতে ইচ্ছা করছে না আপনার, মুঠোফোন হাতে আপনি ঢুকে পড়লেন জাকারবার্গের নীল দুনিয়ায়, ফেসবুকে। নিউজফিডে গোমড়ামুখো আকাশ আর ভেজা ভেজা প্রকৃতির ছবি দেখে আপনার ভেতরটা কি আনচান করে উঠল খানিকটা?